‘রবিজীবনী’র ষষ্ঠ খণ্ড প্রকাশিত হল। এ-খণ্ডের কালসীমা ১৩১৫ থেকে ১৩২০ (১৯০৮-১৯১৪)। বাঙালি রবীন্দ্রনাথের বিশ্বনাগরিক হয়ে ওঠার ইতিহাস এই খণ্ডে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ রবীন্দ্রনাথকে এই আন্দোলনের প্রতি বিমুখ করে তুলেছিল। নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন জমিদারিতে গ্রামোন্নয়নের মাধ্যমে আত্মশক্তির বিকাশের সাধনায়। জাতির উদ্দেশেও একই ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলেন তিনি পাবনার অধিবেশনে। কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে সন্ত্রাসবাদের আবির্ভাবে বিমূঢ় হয়ে গেলেন তিনি। আরও সরিয়ে নিয়ে এলেন নিজেকে—একেবারে ‘আমি’র কেন্দ্রে। নিজেকে জানতে জানতে সম্পর্কগুলি বুঝে নিতে চাইলেন ঈশ্বরের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে। রচিত হয়ে চলল শান্তিনিকেতন ভাষণমালা এবং ‘গীতাঞ্জলি’র গান ও কবিতা—‘রাজা’, ‘অচলায়তন’, ‘ডাকঘর’-এর মতো নাটক। এই সাধনাতেই ভেঙে পড়তে লাগল ‘আমি’র আবরণ-ব্যক্তি ‘আমি’ ও স্বদেশের ‘আমি’। তখনই আহ্বান এসে পৌঁছল বড় পৃথিবীর। গানের ডালি নিয়ে বিশ্বপরিক্রমায় বেরোলেন তিনি। একান্তই নিজেকে শুনিয়েছিলেন সেইসব গান—কিন্তু তা আত্মবোধ-ঋদ্ধ বলেই বিশ্ববোধকে স্পর্শ করল সহজে, অর্জিত হল নোবেল প্রাইজ। বাংলাদেশের কবি হলেন বিশ্বকবি। এই ইতিহাস, বিশেষত বিদেশভ্রমণ ও নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির ইতিবৃত্ত এর আগে আর কোথাও এমন অনুপুঙ্খে আলোচিত হয়নি। আর, ‘রবিজীবনী’র পূর্ববর্তী খণ্ডগুলিতে যেমন, নিপুণ ও অমোঘ নতুনতর তথ্যের পরম্পরায়, যুক্তিসিদ্ধভাবে যাবতীয় তথ্যের বিচারে, এই নতুন খণ্ডেও তেমনই, প্রশান্তকুমার পালের অনুসন্ধানী লেখনী ভেঙে দিয়েছে বহুবিধ ভ্রান্ত ধারণা এবং সুপরিকল্পিত মিথ্যার সৌধ।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.