প্রাচীন মহাকাব্যের যা সংজ্ঞা, তাতে তার পরিসরে সাধারণ মানুষ, বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, নিম্নবর্গের যাপনচিত্র অনর্গল দেখতে পাওয়ার কথা নয়। তবে মহাভারত এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী। যেহেতু মহাভারতের রচনা বা সংকলনপর্ব চলেছে প্রায় আটশো/ন’শো বছর ধরে, তাই এখানে সমাজ বিবর্তনের ছবিও চোখে পড়ে বেশি, নিম্নবর্গের অবস্থান সম্পর্কেও আন্দাজ মেলে। মহাভারতে কয়েকশো জনজাতির উল্লেখ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সময়ান্তরে মিশে গিয়েছে ব়ৃহত্তর শূদ্রসমাজের মধ্যে। তাদের নৃতাত্ত্বিক ইতিবৃত্তের বদলে এখানে নিম্নবর্গের হাল-চিত্রে আলো ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এর অনেকটাই এসেছে ধর্মশাস্ত্রের বিধান হিসেবে। সেদিক থেকে দেখলে ধর্মশাস্ত্রের একটি বিধি বা নিষেধ মানে এক টুকরো জীবনচিত্র। ভুললে চলবে না, মহাভারতের পরিচিতি ধর্মশাস্ত্র হিসেবেও। জনপ্রিয় ক্ষত্রিয় কাহিনির মধ্যে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ধর্মীয় বিধি-বিধান গাঁথা রয়েছে এখানে। অবশ্যই সে সমাজে সবার জন্য সমান সুনীতির প্রয়োগ হয়নি। কারণ বর্ণ-স্বার্থের তাড়না ছিল প্রবল। উদ্বেগের বিষয়, এখনও এদেশে কেবল জন্মসূত্রেই সিংহভাগ মানুষ থাকে অল্পসংখ্যক সুবিধাভোগীর নীচে। দেশে বৈষম্য-বিরোধী আইন হয়েছে,
কিন্তু তার পরেও জাতি-ধর্ম-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য প্রকট— যেমন ছিল মহাভারতের কালে।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.