কথাসাহিত্যে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী সর্বার্থেই নতুন এক ঘরানার অধিকারী। ছোটগল্পে আশ্চর্য সিদ্ধির পাশাপাশি উপন্যাস রচনাতেও তিনি ছিলেন অনন্য। মৌলিক জীবনদৃষ্টি এবং তীব্রতার কারণে তাঁকে বরাবরই নিঃসঙ্গ লেগেছে। একটি সাক্ষাৎকারে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী বলেছিলেন, ‘আমার লেখা এক অর্থে আমার আত্মজীবনী’। বাস্তবিকই সযত্নে, কখনও-বা নির্মমতায়, তিনি বুনেছিলেন তাঁর সময়কে— যে সময়ের শরীরে লেগে আছে ক্রমবিস্তারী নগরসভ্যতার মোহ, চমক, লোভ, পাপ, ক্লান্তি। পুরনো মূল্যবোধের বিপর্যয়, মনোবিকলন তাঁর তীক্ষ্ণ নজরে ধরা পড়েছে বারংবার। একের পর এক ছোটগল্প, উপন্যাসে সাক্ষ্য রয়েছে এসবের। আনন্দ থেকে প্রকাশিত এই ব্যতিক্রমী কথাকারের উপন্যাস সমগ্র দ্বিতীয় খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হল আটটি উপন্যাস— নিশ্চিন্তপুরের মানুষ, সমুদ্র অনেক দূর, আলোর ভুবন, হৃদয়ের রং, নিঃসঙ্গ যৌবন, বনজ্যোৎস্না, স্বর্গোদ্যান, আকাশলীনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অক্লান্ত জ্যোতিরিন্দ্রের এই উপন্যাসগুলিতে আছে জীবনের বিচিত্র রহস্যের অনুসন্ধান। দেশভাগের বলি হাজার-হাজার উদ্বাস্তুর জীবনকথা ‘নিশ্চিন্তপুরের মানুষ’ একটি তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণই বটে। দুই বন্ধুর মাঝখানে একটি নারীর আগমন ঘিরে চাপা উত্তেজনার কাহিনি ‘সমুদ্র অনেক দূর’। রহস্যময় প্রবৃত্তি এখানে তীব্র। কামনা-বাসনায় উৎকীর্ণ ‘আলোর ভুবন’। জটিল মানবহৃদয়ের কথা ‘হৃদয়ের রং’-এ আর আশ্চর্য পুরুষ অমিয়র গল্প ‘নিঃসঙ্গ যৌবন’। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর রচনার সর্বত্রই শ্রেণি বিভাজিত সমাজের নানা ক্ষুধা লক্ষণীয়। ‘বনজ্যোৎস্না’য় যেমন বোকা, বুনো, সাধারণ এক মানুষের কামনা কান্না হয়ে আছে। ‘স্বর্গোদ্যান’-এ গুপ্ত, নিরুচ্চার এক সম্পর্ক। আর ‘আকাশলীনা’ স্পষ্টতই উচ্চাকাঙ্ক্ষী নতুন নগর আর ম্লান পুরনো বাসস্থানের শ্রেণিদ্বন্দ্বের ফসল। একদা-আলোচিত এই উপন্যাসগুলি বহন করে চলেছে এক নিঃসঙ্গ সাহিত্যিকের সুগভীর বিশ্বাসকেই।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.