“সব মানুষের থাকে বোধহয় এক সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। ঋতুকালের কোনো এক নির্দিষ্ট আবর্তে সেই মোকামের কথা তাঁর স্মরণ হয়। কেউ তা বোধ করে বর্ষায়, কেউ শরতে বা শীতে, কারোর বা অন্য ঋতুতে।
একসময় রাজারা এই ঋতুকালে দিগ্বিজয়ে বেরোতেন। এখন আমাদের মতো গেরস্তেরা যায় বেড়াতে। আমি ভাটিকুমার, আমার বোধ যেন-বা বাঁধা আছে শরতে। তাই ঘাসের ডগায় শিশির পড়লে আমার প্রাণ আনচান করতে শুরু করে। তখন বাক্স বাঁধার হুটোপুটি। কিন্তু বহু স্থানে গিয়ে থুয়ে দেখেছি প্রাণের মধ্যে ওই হায় হায় ভাবটি থেকেই যায়। এই ভেজা শিশিরভেজা ঘাসের উপর কাকে যেন চেয়েছিলাম! কৌশানির বিজন বাসে, রানিক্ষেতের শৈলাবাসে, কংখালের গঙ্গাকিনারে গিয়েও মনে হয়েছে, না, এ ঠিক নয়।
অবশেষে তার সন্ধান পাই কালীগঙ্গার পারের এক হিজল-কাশ-হোগল-নলখাগড়ার ঝোপে। আর সেই হলো কাল। এখন ঘাসে শিশির পড়লেই পা চঞ্চল। এই আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। একদা এখান থেকেই দেহতরী ভাসিয়েছিলাম গোনে, তাই এখন উজানযাত্রায় যাই সিদ্ধিগঞ্জের মোকামে। কালীগঙ্গার শেষ ঘাট আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।হোগল, কাশ, নলখাগড়ার ঝোপের মধ্যে থাকে আবার এক মুখ। সে মুখের কোনো বাস্তব অবয়ব নেই, আবার আছেও বা। সে এক বিশাল বিস্তার নদীতে ভাসে। নদীর নাম জানি– ওই কালীগঙ্গা। মুখের নাম, সাধ করে রাাখি জলেশ্বরী। সেই মুখ দেখতে যাওয়া। ওখানে আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।দেখা তো কম হলো না। এখান থেকে দেহতরী ভাসানোর পর কত না দেখলাম! দেখলাম, সর্বত্রই মানুষ মানুষকে খায়। আবার মানুষই মানুষকে মানুষ বানায়। এর নানান কিসিম আছে। একদিন অমূল্য নামের একজন মানুষ গান শুনিয়েছিল রানাঘাটের ইস্টিশানে বসে। বলেছিল সে– মাইনষের চউক্ষের দিকে চাইয়া দ্যাখবেন, তা হলেই বোঝতে পারবেন হে আপনার আত্মীয় কিনা। বলেছি, আত্মীয় যে, হ্যার চউক্ষে দ্যাখবেন জগৎজোড়া চৌখের চাহুনি।
”
[Source: Suprokash]
Reviews
There are no reviews yet.