“বিশ্বের প্রথম সার্থক কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস? কুইজে এমন প্রশ্ন এলে উত্তর অবধারিত আসবে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। যার লেখক মেরি শেলী।
বাংলাতে কল্পবিজ্ঞান লেখা অনেক আগে শুরু হলেও ১৯০৫ সালে লেখা বেগম রোকেয়ার সুলতানাজ ড্রিম কল্পবিজ্ঞানের একটি মাইল ফলক হয়ে আছে। অনেকে এটাকে ফেমিনিস্ট ইউটোপিয়া বলতে চাইলেও বেশ কয়েকজন তাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য ধরে ধরে এটি একটি সার্থক কল্পবিজ্ঞান বলেছেন। এই সুলতানাজ ড্রিম বাংলাতে বেরোয় ১৯২২ সালে। যা কিনা মূল ইংরেজি রচনা টার কিছু পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত অনুবাদ যা স্বয়ং বেগম রোকেয়াই করেছিলেন।
এই কথাগুলি বলার দুটি কারণ। এক তো মেয়েদের কল্পবিজ্ঞান রচনার একটা বিস্তৃত এবং খুবই সমৃদ্ধ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েই আছে। যদিও বিদেশেও কল্পবিজ্ঞান লেখিকাদের প্রথম দিকে নিরুৎসাহ করা হতো, মনে করা হতো মেয়েদের জন্য প্রেমের উপন্যাস কিংবা শিশুদের উপযোগী গল্প কবিতা লেখাই শ্রেয়। একসময় মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষা দেবার শুরুর দিকে যেমন মেয়েদের বিজ্ঞান পড়ার দরকার টা কি এমন সব কথা বলা হত, বলা হত মেয়েরা জ্যামিতি পড়িয়া কী করিবে—- সেই রকম একই প্রশ্ন উঠেছিল মেয়েরা কল্পবিজ্ঞান লিখিয়া কী করিবে? তাও সেসব পরোয়া না করে মেয়েরা কল্প বিজ্ঞান লিখেছেন এবং খুব সফলভাবে লিখেছে্ন। দ্বিতীয় কারণটি —-এই সংকলনটি সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখলাম আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে বেগম রোকেয়া সুলতানার স্বপ্ন লিখেছিলেন, সেই হিসেবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে এপার বাংলা ওপার বাংলার কুড়ি জন লেখিকার কল্পবিজ্ঞান রচনা, নাহ, নিঃসন্দেহে বলা যায় সুলতানার স্বপ্নের শতবর্ষ উদযাপনের এর থেকে ভালো আয়োজন আর কিছু হতেই পারে না।
কালানুক্রমিকভাবে সাজানো এই সংকলনের শুরু লীলা মজুমদারকে দিয়ে যাঁর জন্ম সাল ১৯০৮ এবং শেষ নবীনা অঙ্কিতা মাইতি কে দিয়ে যার জন্ম সাল ১৯৮৮। এই ৮০ বছরে বঙ্গ জীবনে এবং সারা বিশ্বে প্রভূত বদল ঘটেছে। দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ, দেশ ভাগ, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণ, বিশ্বায়ন এবং উত্তর শিল্পায়ন আমাদের একেবারেই অন্য এক সময় নিয়ে এসে ফেলেছে যখন একদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে অন্যদিকে কম্পিউটার ও জৈব প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি মানুষের জন্মের জন্য নারীর গর্ভকে অপ্রয়োজনীয় করে দিচ্ছে, মানুষ এবং যন্ত্রের সীমারেখা প্রায় মুছে যাচ্ছে। এই কুড়ি জন লেখিকা এইসব নানান বিষয়কে , আরও অনেককিছুই ধরেছেন তাঁদের গল্পে। বিশুদ্ধবাদীরা হয়তো সব গল্পকে কল্পবিজ্ঞান বলে পাশনম্বর দিতে চাইবেন না, আসলে speculative fiction এর বিভিন্ন জঁনারে একটার থেকে আরেকটা সীমারেখা খুবই আবছা। বিজ্ঞানআশ্রয়ী গল্প, ভবিষ্যতের গল্প জায়গা করে নিয়েছে এখানে। কল্পবিজ্ঞান মানেই কিন্তু শুধু নক্ষত্রযুদ্ধ নয় বরং তা ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে মানুষের মূল্যবোধ কী দাঁড়াবে, মানুষ এবং যন্ত্র মানুষের সম্পর্ক কেমন হবে, প্রেম যৌনতা সামাজিকতা কীভাবে বদলে যাবে —-এর খানিকটা আন্দাজ আমরা কল্পবিজ্ঞানের গল্প থেকে যদি না—-ই পাই, তাহলে তা ওই বিশুদ্ধবাদীদের বাঁধা একটা অচলায়তন হয়েই থাকবে বলে ভয় হয়।
বাণীদি তাঁর একটি গল্প আমাদের দিয়েছেন, তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। খুবই আনন্দের কথা, এই সংকলনের জন্য প্রথম কল্পবিজ্ঞান লিখেছেন অনিতা অগ্নিহোত্রী। নবনীতা সেনগুপ্ত এবং রিমি বি চ্যাটার্জির গল্প দুটি ইংরেজিতে লেখা, সে দুটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সংহিতা স্যান্যাল এবং সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রিমি বি চ্যাটার্জি এবং মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে যশোধরা রায়চৌধুরীর মাধ্যমে, তাকে ধন্যবাদ। তানজিনা হোসেন তান্নির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তৌফিক জহুর।”
[Source: Dhansere Publication]






Reviews
There are no reviews yet.