কেয়াবাৎ-মেয়ে মানে—শাবাশ মেয়ে। বাহাদুর মেয়ে। নব্যকালের নতুন নায়িকা সে। যে মেয়েরা সাঁজ-সেঁজুতির ব্রত নিত, আদর করে পিঁড়ি পেতে অন্ন দিত, এ-মেয়ে তাদের থেকে পুরোপুরি আলাদা। যেমন সাজপোশাকে তেমনই চালচলনে। বাঙালি বলে যেন চেনাই যায় না।সাতটি নিবন্ধে আসলে সাতটি নারী, মানে সাতটি প্রতীক, সাত রকমের জীবন এবং যন্ত্রণা, একটি সমাজ ও কয়েকটি সময়কে ধরার জন্য সাত-সাতটি প্রেক্ষিত। সমাজ-উত্তরণের সাতটি ছবি শ্রীপান্থর বিশ্লেষণী কলমে।স্কুল-কলেজে পড়া উনিশ শতকের নতুন বাঙালি মেয়েদের আবির্ভাব এবং সাবেক সমাজের ভারী পশমের পর্দা ভেদ করে তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার রোমাঞ্চকর উপাখ্যান যেমন, ধরা যাক, ‘কেয়াবাৎ মেয়ে’ রচনায়, সমাজের মধ্যে অন্য সমাজের অন্য ধরনের নারীজীবনের রূপালেখ্যও ধরা আছে অন্যান্য নিবন্ধে। যে-রকম একটি রচনা ‘কালাবিবি’। এদেশের মেয়ে যখন ঘর করছেন সফেদ সাহেবের সঙ্গে তখন তাঁর প্রাপ্ত জীবন ও জগৎ।কিন্তু মেয়েদের নিয়ে এইসব সমাজ-ঐতিহাসিক রচনা শুধু সেকালের নারীকেই বিম্বিত করে না, করে তাদের নিজস্ব পুরুষ, পরপুরুষ এবং পার্শ্বস্থ পুরুষকেও। কিশোরী-ভজনার অধিকার নিয়ে যে পুরুষসমাজ এককালে সভা ডেকেছিল ময়দানে মনুমেন্টের তলদেশে। পটের বিবিদের নিয়ে রচনায় পট, পটুয়া ও পটস্থ পটীয়সীদের পাশাপাশি লেখক তুলে ধরেন বিবিদের দ্বারা আমোদিত, আলোড়িত বাবুদের বাড়ি ও বাগানবাড়ির পটভূমিকাও। লেখক লিখেছেন ধবলাঙ্গী, ধূম্রকেশী বিদেশিনীদের জন্য উন্মাদ ভারতীয় যুবসমাজের কথা। প্রশ্ন তুলেছেন অন্যত্র- বাঙালি শিল্পীদের মধ্যে সিক্তবসনা সুন্দরী আঁকার রেওয়াজ প্রচলিত হল কেন? লেখকের অসংখ্য কৌতূহলের মধ্যে একটি- কালীঘাট পটের ওই সুন্দরীরা কারা? বাঙালি বাবুদের মধ্যে ইউরোপীয় মর্মর সুন্দরীদের জন্য ওই ব্যাকুলতা, কেন?বর্তমান গ্রন্থটি একটি সপ্তপর্ণী শাখালতা। যেখানে সাতটি প্রসঙ্গের আধারে সাত-সতের চিন্তাভাবনা। বহু প্রশ্ন, বহুতর উত্তরের উদ্যোগ। বাঙালির মনোজগতের আলোছায়ার একটি চিত্রপ্রতিবেদন। যে বর্ণাঢ্য রচনাকে রোমাঞ্চকর করেছে দুষ্প্রাপ্য সব ছবি|বাংলা ভাষায় এ-হেন একটি গ্রন্থও অদৃষ্টপূর্ব।
[Source: Patra Bharati]
Reviews
There are no reviews yet.