তারপর শুধু যাওয়া-আসা। য়ুরোপ-আমেরিকার অনেকটাই তো দেখে ফেললাম। একটু-একটু করে দেখার চোখ বদলে গেল।… ল্যুভরে ঢুকে মোনালিসাকে দেখে মন খারাপ করে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু কেউ যদি বলেন প্যারিসের পিগ্যালের ব্যাপারে আমার কোনও অভিজ্ঞতা আছে কিনা, তাহলে বলব আমি আমার হাতের রেখাদের মতো জায়গাটা চিনি। এমনকী আমাদের কলকাতার উপকণ্ঠে গড়িয়ার মেয়ে বাসন্তী যে ওখানে আরও তিনটে বিদেশিনীর সঙ্গে ঘর ভাড়া করে থাকে তাও আমার জানা। সানফ্রান্সিসকোর চিনে পাড়ার ছোট্ট দোকানের মালিক বৃদ্ধের কাছে কলকাতার গল্প শুনেছি। সেই কলকাতা পঞ্চাশের দশকের। আগ্রার তাজমহলের একটু ওপাশের এঁদো গলিতে সাধারণ দোকানে যে কাবাব খেয়েছি, তার তুলনা কোথাও খুঁজে পাইনি। কোনও দেশে গেলে দ্রষ্টব্য বলে প্রচারিত ঐতিহাসিক সৌধগুলো দেখার চেয়ে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে মিশতে বেশি ভালো লাগে। আমি মনে করি, মাটি, জলহাওয়া যেমন গাছেদের চরিত্র বদল করে তেমনি মানুষকেও আলাদা চরিত্র দেয়। মরুভূমিতে যারা জলের জন্যে সংগ্রাম করে তাদের সঙ্গে সুন্দরবনে জলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা মানুষের আকাশ- পাতাল পার্থক্য। হয়তো মিল আছে হৃদয়ে। কিন্তু তার প্রকাশও তো আলাদা। এই মানুষদের দেখার অভিজ্ঞতা যাযাবরী।…’ সমরেশ মজুমদার। একালের বরণীয় কথাশিল্পীর চোখ দিয়ে বৈচিত্র্যময় পৃথিবী ও বিচিত্রসব মানুষকে দেখার এক অনাস্বাদিত ছবি যাযাবরী। সুবৃহৎ এই গ্রন্থে একত্রিত হয়েছে আকাশ না পাতাল, না আকাশ না পাতাল, বিনিসুতোয়, পায়ে পায়ে পাহাড়ে, নরওয়ের কবি সম্মেলন এবং নিউ ইয়র্কে রহমান… ভ্রমণ উপাখ্যান।
[Source: Patra Bharati]
Reviews
There are no reviews yet.