Bestselling Book Pratham Alo or Pratham Aalo is written by legendary Bengali writer Sunil Gangopadhyay. Prothom Alo is sequel to another bestselling book by Sunil Gangopadhyay “Sei Samay”. Prothom Alo or Pratham Alo is published by Ananda Publishers.
Pratham Alo by Sunil Gangopadhyay
তির সামনে ছুটে যাওয়ার আগে কিছুটা পিছিয়ে যায়। ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে যে-কোনও সমাজের মাঝেমাঝে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিকে পিছু ফিরে দেখা দরকার। আমাদের দেশের অনতি-অতীতের পুনদর্শন ও পুনর্বিচার নিয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণাঢ্য, বেগবান উপন্যাস ‘প্রথম আলো’। উপন্যাসটিতে আছেন রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফীর মতো খ্যাতনামা সব ঐতিহাসিক চরিত্র। তা সত্ত্বেও ‘প্রথম আলো’র মূল নায়ক- সময়। আঠারোশো তিরাশি থেকে উনিশশো সাত পর্যন্ত যে-সময়কাল বিস্তৃত। যখন হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে নবজাগরিত কিছু মানুষ আবিষ্কার করছে দেশ নামের এক ভাবসত্তাকে, অনুভব করছে পরাধীনতার গ্লানি।
রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, মহেন্দ্রলাল সরকারদের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারা, পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ ও প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের ভূমিকা, রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের নানা রূপান্তর, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে নবীনদের মতবিরোধ, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সূচনা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা সৃষ্টি ইত্যাদি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ অনুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে। মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি ও বিশালতা নিয়ে এই উপন্যাসের কাহিনি পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায়, তারপর সমগ্র ভারতে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ‘প্রথম আলো’ পাঠকচিত্ত জয় করেছে কবেই, কালজয়ের সামর্থ্যেও সে বলীয়ান।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম আলো (১৯৯৬) বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি শুধু একটি কাহিনি নয়, বরং উনবিংশ শতকের বাংলার জাগরণকাল, সমাজ সংস্কার ও চিন্তাধারার পরিবর্তনের এক মহাকাব্যিক রূপ। উপন্যাসটির মাধ্যমে লেখক পাঠককে নিয়ে যান বাংলার সেই সময়ে, যখন সমাজ, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি ও ধর্মীয় ভাবনার মধ্যে ঘটছিল গভীর আলোড়ন।
উপন্যাসের পটভূমি
প্রথম আলো মূলত উনবিংশ শতকের বঙ্গীয় নবজাগরণকে কেন্দ্র করে রচিত। এই সময়কালেই বাংলায় মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার, সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের উত্থান, নতুন শিক্ষার বিস্তার, ইউরোপীয় চিন্তাধারার প্রভাব ও সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন আন্দোলন জন্ম নেয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিস্তৃত গবেষণা ও কল্পনার সংমিশ্রণে সেই যুগকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
প্রধান চরিত্র ও ব্যক্তিত্বসমূহ
এই উপন্যাসের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল—এর চরিত্ররা কল্পিত নয়, বরং ইতিহাসের বাস্তব মানুষ। বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ বাংলার ইতিহাস গড়া ব্যক্তিত্বরা এখানে উঠে এসেছেন। তাদের সাফল্য, সংগ্রাম, ব্যর্থতা ও মানসিক দ্বন্দ্ব উপন্যাসে একত্রিত হয়ে নবজাগরণের এক বর্ণময় ছবি তৈরি করেছে।
বিশেষভাবে বিদ্যাসাগরের চরিত্রটি উপন্যাসে উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়েছে। সমাজ সংস্কারক, নারীশিক্ষার প্রবক্তা ও বিধবা বিবাহের আন্দোলনের পথিকৃৎ বিদ্যাসাগরের মানবিকতা, একাগ্রতা ও দৃঢ়সংকল্প পাঠককে মুগ্ধ করে। আবার মধুসূদনের জীবনের উত্থান-পতন, তাঁর প্রতিভার উজ্জ্বলতা ও জীবনের করুণ বাস্তবতাও উপন্যাসে অনবদ্যভাবে চিত্রিত।
বিষয়বস্তু ও থিম
সমাজ সংস্কার: সতীদাহ প্রথা বিলোপ, নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহের প্রচলন ইত্যাদি সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু।
সংস্কৃতির রূপান্তর: ইউরোপীয় দর্শন, ইংরেজি শিক্ষার আগমন ও পাশ্চাত্য সাহিত্য বাংলার সংস্কৃতিকে নতুনভাবে গড়ে তোলে।
সংঘর্ষ: পুরনো প্রথাগত সমাজ ও নতুন আলোর মধ্যে সংঘাত উপন্যাসে প্রবলভাবে প্রতিফলিত।
মানবিকতা: ব্যক্তিত্বদের জীবন কাহিনির মধ্য দিয়ে বোঝা যায় তাদের মানবিক দুর্বলতা, দ্বিধা, সাহস ও আত্মত্যাগ।
ভাষা ও শৈলী
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষাশৈলী সহজ, প্রাণবন্ত ও পাঠযোগ্য। তিনি ইতিহাসকে শুষ্ক আখ্যান বানাননি, বরং গল্পের ভঙ্গিতে ও চরিত্রদের সংলাপে যুগের আবহকে জীবন্ত করেছেন। পাঠক মনে করবেন, তিনি যেন বিদ্যাসাগরের পাশে বসে আছেন, কিংবা মধুসূদনের উচ্ছ্বাস শুনছেন।
উপন্যাসের তাৎপর্য
প্রথম আলো বাংলা সাহিত্যে এক মাইলফলক। এটি কেবল অতীতের দলিল নয়, বর্তমান সমাজের জন্যও শিক্ষণীয়। নবজাগরণের মানুষেরা যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস আজও প্রাসঙ্গিক। নারী-পুরুষের সমতা, শিক্ষা বিস্তার, যুক্তিবাদ, মানবিকতা—এসব প্রশ্ন আজও আমাদের সমাজে আলোচিত। সেদিক থেকে এই উপন্যাস শুধু ইতিহাস নয়, সমকালীন প্রেরণার উৎস।
সমালোচনা ও গ্রহণযোগ্যতা
প্রকাশের পর প্রথম আলো ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে এবং এটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। সমালোচকরা বলেন, এটি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা কাজ। অনেক পাঠকের মতে, ‘প্রথম আলো’ বাংলা ভাষায় রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি।
উপসংহার
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলো এক অনন্য সৃষ্টি, যেখানে ইতিহাস, সাহিত্য ও সমাজতত্ত্ব মিশে গেছে শিল্পের রূপে। এটি আমাদের শেখায়, কীভাবে কিছু দূরদর্শী মানুষ অন্ধকার সমাজে প্রথম আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন। এই উপন্যাস কেবল পড়ার জন্য নয়, ভাবার ও শেখার জন্য—যা আজও পাঠককে আলোড়িত করে।
You can read Sunil Gangopadhyay’s Sei Samay Also.
You can check more books from www.spectralhues.com
Reviews
There are no reviews yet.