দৌড়-এ প্রথম আত্মপ্রকাশ। তারপর থেকে ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রজাপতির বিবর্তিত জীবনের গল্পের মতোই, তাঁর লেখকসত্তা কথাসাহিত্য রচনার পর্বপর্বান্তরের মধ্য দিয়ে ক্রমশ পরিণত হয়েছে। জীবনকে নানা দিক থেকে দেখার প্রত্যয় ও দায়বদ্ধতা অনুভব করেছেন তিনি। তাঁর অবিস্মরণীয় ট্রিলজি উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ মানুষকে নতুনভাবে চিনতে শিখিয়েছে। পাঠককে নিয়ে গেছে ভাবনার অন্যস্তরে। আত্মবীক্ষার দর্পণে আমাদের নিজস্ব প্রতিফলন কোথায় ভেঙেচুরে যায়, কোথায় তা কৌণিক হয়ে ওঠে, তার অনুপুঙ্খ আয়োজনে তাঁর উপন্যাসগুলি গভীরভাবে ঋদ্ধ। একই সঙ্গে গল্পবলার কৃতিত্বে তাঁর নিজস্ব লিপিমালা আদ্যন্ত বিশ্বস্ত। শিল্পসামর্থ্যে প্রথম থেকেই পরিণত সমরেশের ভাষাভঙ্গি। উপন্যাসের বিষয়বস্তু নির্বাচনে সমরেশ যে-বৈচিত্র্যের অনুসন্ধান করেছেন, বাংলা উপন্যাসের ধারাবাহিকতায় তা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। একই রকম কাহিনির ছকে তিনি কখনও বন্দি থাকেননি। ফলে তাঁর উপন্যাস সবসময়েই নতুন স্বাদ ও নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে। জীবনের যে-মর্মরূপ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর অপ্রতিহত কাহিনিগুলিতে, তাকে অনেক সময় এক অপ্রত্যাশিত প্রতিঘাত বলে মনে হয়। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে, সমাজ-আশ্রিত মানুষের অবয়ব এমনই। তাকে কোনওভাবে লুকনো যায় না। তার চেয়েও বড় কথা, কাহিনির অনিবার্য ভারসাম্য রাখতে গেলে মানুষকে রক্ত-মাংসসহ জীবন থেকে তুলে আনতে হয়।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.