বিরামচিহ্ন বা যতিচিহ্ন ব্যবহারের রীতি সকল ভাষাতেই আছে, বাংলা ভাষাও এর বাইরে নয়। বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগেও আমরা বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের রীতি দেখতে পাই। প্রাচীন আমল থেকে মধ্যযুগ পেরিয়ে বাংলা বিরামচিহ্ন আধুনিক যুগেও সমানভাবে পর্যকর। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। আগের কবি লেখক বিরামচিহ্ন প্রয়োগ ও ব্যবহারের রীতিটি পুরোপুরি মানতে চান না, কেউ কেউ বিরামচিহ্ন ছাড়া কবিতা-উপন্যাস-গল্প লিখছেন। অনেক লেখক, শিক্ষার্থী বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের বিধি সম্বন্ধে উদাসীন। অনেকে জানেনও না, কোথায় কোন চিহ্নটা ব্যবহার করতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ বরাবরই বিরামচিহ্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন, কিন্তু তিনিও বিরামচিহ্ন শেষপর্যন্ত ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কেন বিরামচিহ্ন ব্যবহার করতে হবে- সে সম্বন্ধে বিশেষ কোনো লেখালেখি বাংলা ভাষায় হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ‘চিহ্ন বিভ্রাট’ শিরোনাম দিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন। এরপরে সুনীতি কুমার এ নিয়ে লিখেছেন, কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা মাত্র। অথচ ভাষা নির্মাণে বিরামচিহ্ন একটি বড় বিধি, আমরা এড়াতে পারি না। ড. মোহাম্মদ হাননান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হলেও তাঁর লেখালেখি-গবেষণা সব ইতিহাস নিয়েই। এবার যে বিরামচিহ্ন ও যতিচিহ্ন বইটি লিখেছেন তাতেও ইতিহাস বাদ যায় নি।
বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণের পাঠক ও গবেষক এ প্রথম বিরাম চিহ্নের ইতিহাস ও রীতি-নীতি নিয়ে একটি বই পাচ্ছেন, যার কাজ ছিল
অপেক্ষিত। কাজটি গবেষক যথেষ্ট যত্নের সঙ্গে করেছেন এবং এ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেরও তাগিদ দিয়েছেন। বইটি পড়ার পর আমাদের সকলেরই মনে হবে, এমন একটি বই আরো আগেই আমাদের প্রয়োজন ছিল।
শতাধিক গ্রন্থ প্রণেতা ড. মোহাম্মদ হাননান প্রধান ভাবে ইতিহাস বিষয়ের গবেষক হলেও সাহিত্য গবেষণায়ও তিনি তাঁর মুন্সিয়ানা ইতোমধ্যে দেখিয়েছেন। বাংলা ভাষায় বিরামচিহ্ন ও যতিচিহ্ন : ইতিহাস রীতিনীতি ও প্রয়োগ বইটি তার প্রমাণ। পাঠক বইটি থেকে ভাষা চর্চায় অনেক রসদ পাবেন। গবেষণা হলেও বইটি সাধারণ পাঠকের কাছে উপভোগ্য করে তোলা হয়েছে সহজ-সরল বাক্য প্রয়োগে। অনেক রকম বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বিরামচিহ্ন ব্যবহারের বৈচিত্র্যের দিকটি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
[Source: Kotha Prokash]






Reviews
There are no reviews yet.