গদ্য যেন এক শব্দসমুদ্র। অজস্র নদীর জলস্রোত মিশেছে ব্যাপ্ত মোহনায়। যেটি ছিল ভাস্কর্যের মতো অনিন্দ্য, অথচ স্থির, কিন্তু সৌন্দর্য-বিচ্ছুরিত। সূচনাকালে। ক্রমেই বাংলা গদ্য হয়ে ওঠে জলের মতো ঘুরে ঘুরে আশ্চর্য ঐশ্বর্যে ভরপুর অতল জলধি। যেখানে প্রতিনিয়ত আছড়ে পড়ছে অগাধ, অবাধ শব্দচূর্ণ। সেসব উজ্জ্বলতা, বিকীর্ণ কল্লোল কালগ্রন্থি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে এনেছেন কথাসাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম।
বাংলা গদ্যের প্রাথমিক রূপ, কেমন ছিল ওই হাঁটতে শেখার শিশুবেলায়? ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ১৮০০ সালে আধুনিক গদ্যের চর্চা শুরু হয়। যাতে ছিল সংস্কৃত শব্দের আধিক্য। সেটিই কালে কালে বাংলা ভাষার সাহিত্যসেবী ও শিল্পীদের কলমে হয়ে ওঠে ঐশ্বর্যময়, স্বতঃস্ফূর্ত এবং প্রাণোচ্ছল প্রবাহ। ফয়জুল ইসলাম দেখিয়েছেন, বাংলা গদ্য এই অঞ্চলে মধ্যযুগেও ছিল।
সাম্প্রতিক কথাসাহিত্যে অভাবিত ও দিব্যোজ্জ্বল চিহ্ন রেখে চলেছেন ফয়জুল ইসলাম। সেখানে যেমন লক্ষণীয় কাহিনির চমৎকারিত্ব, অন্যদিকে ভাষার শিল্পিত শৈলী। বিদ্যায়তনিক অর্থনীতি চর্চা তাঁর এই ভাষার শিল্প-সৌন্দর্য আবিষ্কারে বাধা হতে পারেনি। গল্প রচনার সঙ্গে আধুনিক বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশ নিয়ে তাঁর অভিনিবেশ ঈর্ষণীয়। ওই প্রজ্ঞার পরিচয় রয়েছে সংকলনের রচনাসমূহে। বাংলা গদ্যচর্চার দীর্ঘ ইতিহাস, অসংখ্য দৃষ্টান্ত-সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপকতার কারণে তা গবেষণারই বিষয়। ফয়জুল ইসলাম অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় সেটি উপস্থাপন করেছেন। ফলে জটিলতাজনিত কোনো দুর্বোধ্যতা রচনাগুলো পাঠে বাধা সৃষ্টি করে না। অধ্যাপক সনৎকুমার সাহার নাতিদীর্ঘ ভূমিকাটিও বইটির গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। বইটি বাংলা গদ্যচর্চার ইতিহাসে দিব্যদ্যুতিময়।
Reviews
There are no reviews yet.