উনিশ শতকের বাংলা ও বাঙালির জীবন-সংস্কৃতির বহু মূল্যবান সম্পদ বিধৃত হয়ে আছে পুরনো পত্র-পত্রিকায়। সেকালের বাংলা সংবাদপত্রগুলিতে ওই শতকের বাঙালি-জীবনের যে-নিখুঁত চিত্র আমরা পাই, তা আর কোথাও লভ্য নয়। অথচ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এই সমস্ত সংবাদপত্র আজ ধ্বংসের মুখে। তখনকার বহু বিখ্যাত সাময়িকপত্রের অবস্থাও তেমনই জীর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই অমূল্যসম্পদও হয়তো একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুন্দর লাইন এনগ্রেভিং ছবি দিয়ে ছাপানো বাংলার প্রথম সচিত্র মাসিক পত্র বিবিধার্থ-সংগ্রহ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ‘জীবনস্মৃতি’তে লিখেছিলেন : ‘রাজেন্দ্রলাল মিত্র মহাশয় বিবিধার্থ-সংগ্রহ বলিয়া একটি ছবিওয়ালা মাসিকপত্র বাহির করিতেন। তাহারই বাঁধানো একভাগ সেজদাদার আলমারির মধ্যে ছিল। সেটি আমি সংগ্রহ করিয়াছিলাম। বার বার করিয়া সেই বইখানা পড়িবার খুশি আজও আমার মনে পড়ে। সেই বড়ো চৌকা বইটাকে বুকে লইয়া আমাদের শোবার ঘরের তক্তাপোশের উপর চিত হইয়া পড়িয়া নর্হাল তিমিমৎস্যের বিবরণ, কাজির বিচারের কৌতুকজনক গল্প, কৃষ্ণকুমারীর উপন্যাস পড়িতে পড়িতে কত ছুটির দিনের মধ্যাহ্ন কাটিয়াছে। এই ধরণের কাগজ একখানিও এখন নাই কেন।’ রবীন্দ্রনাথের এই আক্ষেপ আজ পুরনো পত্র-পত্রিকার জীবনে আরও সত্য হয়ে উঠেছে। বাঙালির জীবনযাপন, চিন্তাচেতনা ও সাহিত্যসংস্কৃতির দুষ্প্রাপ্য আকর ও উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্রগুলির ভূমিকা সব সময়েই স্মরণযোগ্য। ইতিপূর্বে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা’ এবং বিনয় ঘোষ তাঁর ‘সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র’ গ্রন্থে বাঙালির জীবনপ্রবাহের বিবিধ দিক তুলে ধরে উনিশ শতকের বাংলার একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজচিত্র আঁকতে প্রয়াস পেয়েছেন।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.