মহাভারতে লক্ষ শ্লোকের অক্ষর-শরীরে রয়েছে কত শত নীতিকথা, কত সু-উচ্চ দর্শন। তবুও ভরপুর হিংসাই যেন এই কাহিনির এবং এর অন্তর-গত রাজনীতির দিকনির্দেশ করে। এখানে অহিংসা কেবল সম্ভাবনা, হিংসা হল অনস্বীকার্য বাস্তব। প্রধান পাত্রপাত্রীদের প্রায় সকলেই হিংসার অস্ত্রে স্বার্থসিদ্ধি চেয়েছেন— এমনকী কৃষ্ণও। সেই কারণেই মহাভারতের রাজনীতিকে হিংসার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার উপায় নেই। ‘গীতা’তেও দেখি, তাত্ত্বিক অবস্থানের বাইরে যে ব্যবহারিক দিক, সেখানে বর্ণ-ধর্মের নামে ভ্রাতৃহত্যা, গণহত্যা সমর্থিত হয়েছে। হিংসার বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে মহাভারতের রাজনীতি। সমাজ-শাসনের অছিলাতেও হিংসাকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে। আবার, নানা রকম তত্ত্বকথার মোড়কে তাকে আড়াল করার চেষ্টাও হয়েছে। সেদিনের রাজতন্ত্র থেকে আজকের গণতন্ত্র— ছবিটা কিন্তু অল্পই পালটেছে। এদেশে রাজনীতি এখনও বহুলাংশে হিংসা-কলুষিত। এমনকী, আধুনিক রাষ্ট্রও অনেক সময় হিংসাকে রাজনৈতিক লড়াই জেতার কৌশলী-অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এবং ঐতিহ্যের নামে মহাকাব্যের পরিসরে এসবের বৈধতা খোঁজে। মহাভারতে হিংসার রাজনীতির পর্যালোচনা তাই আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.