নাম না বলে দিলেও বুঝতে অসুবিধে হবার নয় যে, এ-ভ্রমণকাহিনী ফরাসীদেশকে কেন্দ্র করে। কে যেন একবার বলেছিলেন, প্রত্যেক শিল্পীরই দুটি মাতৃভূমি। একটি, যেখানে যে জন্মেছে; অন্যটি হল, ফ্রান্স। শিল্পী বলতে এখানে শুধুই চিত্রকরদের কথা বলা হয়নি, কবিরাও নিশ্চিত এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এই ফরাসিদেশেই যেমন ছিলেন দেগা, মোনে, মানে, রেনোয়া, গগ্যাঁ, মাতিস, রুয়ো কি পিকাসোর মতন মহান শিল্পীরা। তেমনি এই দেশ ৱ্যাবো , ভের্লেন, বদলেয়ার, মালার্মে, ভালেরি, অ্যাপোলিনিয়ার আর আঁরি মিসোর মতন কবিদেরও। ফরাসীদেশই তাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার আত্মার বর্ণনায় এসে যেতে বাধ্য, ছবির দেশ ও কবিতার দেশ। কবি ও শিল্পীদের এই অমরাবতীতে একবার নয়, বারবার গিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পাঁচবারের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এই বই। সাধারণ ভ্রমণকাহিনীর থেকে এ-রচনার স্বাদ একেবারে আলাদা। নিছক ঘোরাফেরা আর দেখাশোনার মামুলী বৃত্তান্ত নয় এই বই। পুরো ফরাসীদেশটাকেই যেন খুঁড়ে-খুঁড়ে দেখা। তার শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের মধ্যে বিচরণ। শুধু এই শতকেই নয়, গত শতকেও। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন চিত্রশিল্পী ও কবিরা পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানান সৃষ্টিশীল আন্দোলনে। স্বাভাবিকভাবেই এ-ভ্রমণকাহিনীতে এসে পড়েছে মার্গারিট নামে সেই ফরাসী বান্ধবীটির কথাও, প্রথমবার আমেরিকা-প্রবাসকালে যার সাহচর্য ফরাসীদেশকে গভীরভাবে জানতে সাহায্য করেছিল। মার্গারিটকে নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাস লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কিন্তু এই প্রথম মার্গারিটের সঙ্গে তাঁর গভীর অন্তরঙ্গতার আনুপূর্ব কাহিনী অকপটে বর্ণনা করলেন তিনি। এই ভ্রমণকাহিনীতে তাই টুকরো আত্মজীবনীরও স্বাদ। আর মার্গারেটের সূত্রেই এই ভ্রমণকাহিনীতে এসেছে আমেরিকার বিটবংশ ও গ্রিনিচ গ্রামের কবিদের সঙ্গে তুমুল আড্ডার স্মৃতি। এ-গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে রয়েছে বিখ্যাত একেকজন ফরাসী কবির কবিতা থেকে উদ্ধৃতি। এই অনুবাদের কাজে গদ্যলেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সহযোগী হয়েছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.