ভাষা, বাক্য শব্দ, অর্থ, ব্যাকরণবিধি ও বাগ্ধারা, এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে যা শুদ্ধ রীতি বলে মান্য হবার যোগ্য, তারই সন্ধান-কর্মে নিযুক্ত রয়েছে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহারবিধি’র অন্তর্ভুত গ্রন্থমালা। ভাষা যদি হয় একের ভাবনাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেবার মাধ্যম, তা হলে কীভাবে সেই মাধ্যমকে ব্যবহার করা সংগত, বাক্যের গঠন ও শব্দনির্বাচনই বা কেমন হওয়া উচিত, আবার যা আমাদের স্বাভাবিক বাগ্ধারা, তার সঙ্গেই বা আমাদের ভাষার সংগতি কীভাবে রক্ষিত হতে পারে, এই গ্রন্থমালা বস্তুত তারই পন্থা নির্দেশ করছে। ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও রূপান্তর—একে-একে সবই এসে যাচ্ছে এই গ্রন্থমালার পরিকল্পিত বৃত্তে। একই সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এমন কয়েকটি কোষগ্রন্থ ও শব্দাভিধানের কথাও, ঠিক যে-ধরনের কোষগ্রন্থ ও অভিধান ইতিপূর্বে অন্তত বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি। যাঁর যে-বিষয়ে চর্চা অথবা অধিকার, তাঁরই উপরে ন্যস্ত সেই বিষয়ে গ্রন্থরচনার দায়িত্ব। ব্যবহারবিধি-গ্রন্থমালায় প্রকাশিত প্রতিটি অভিমতই যে আনন্দবাজার পত্রিকার, এমন নয়। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায় না। এই পত্রিকা আসলে এ-ক্ষেত্রেও তৈরি করে তুলতে চায় এমন একটি পরিমণ্ডল, নানা বিষয়ে পারঙ্গম ব্যক্তিরা যেখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আপনাপন অভিমত ও সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করতে পারবেন। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর ‘ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গলা ব্যাকরণ’-এর পর দীর্ঘকাল বাংলা ভাষার কোনও ব্যাকরণগ্রন্থ রচিত হয়নি—এমন গ্রন্থ যা পাঠ্যক্রমের দিকে তাকিয়ে রচিত নয়, সর্বসাধারণের দৈনন্দিন চাহিদাকে যা মেটাবে এবং জিজ্ঞাসু মনকে যা তৃপ্ত করবে। সেই দিকে তাকিয়েই এই ব্যাকরণগ্রন্থটির পরিকল্পনা। পাণিনি থেকে বিদ্যাসাগর—সংস্কৃত ব্যাকরণের এই আড়াই হাজার বছরের, এবং মানোয়েল থেকে সুনীতিকুমার-বাংলা ব্যাকরণের এই আড়াই শো বছরের পটভূমি অল্পপরিসরে আলোচিত এখানে। সেইসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে প্রথাগত ব্যাকরণের সঙ্গে নব্য ব্যাকরণচিন্তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়। নোয়াম চম্স্কি প্রভাবিত পাশ্চাত্য নব্যব্যাকরণচিন্তার বীজ যে ভারতীয় প্রাচীন ব্যাকরণচিন্তার মধ্যেও ছড়ানো ছিল এ-গ্রন্থে তা দেখিয়েছেন লেখক, একইসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন ভবিষ্যতের বাংলা ব্যাকরণের চলার পথেরও। প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও ভাষাতাত্ত্বিক দিকগুলির সঙ্গে পরপর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সুপ্রয়োগ ও অপপ্রয়োগের বিভিন্ন নিদর্শন উপস্থিত করা হয়েছে এ-গ্রন্থে, ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের হাত ধরে চলতে-চলতে তুলে ধরা হয়েছে চলতি ভাষার বিশিষ্ট ভঙ্গিগুলিকে। সেদিক থেকে গ্রন্থটি একান্তভাবে মান্য চলিতভাষার ব্যাকরণ রচনার প্রেরণা হয়ে ওঠার যোগ্য। বৈদগ্ধ্যের সঙ্গে রসবােধের এক অনবদ্য মিশেলে এ-গ্রন্থ আদ্যন্ত স্বাদু স্বাদু পদে পদে।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.